শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বিদায় ও আগমনে নেক আমল

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার অন্যতম এক দান। সময়ের সমষ্টিই জীবন। মহান আল্লাহ কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে মাস গণনায় মাস বারোটি।’সুরা আত তাওবা : ৩৬

ঈসায়ী ক্যালেন্ডারে ২০২২ সাল শেষ হয়েছে এবং ২০২৩ সাল আরম্ভ হতে যাচ্ছে। নতুন বছর আসা মানে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হওয়া। নতুন বছর আসা মানে জীবনের নির্ধারিত আয়ু থেকে একটি বছর চলে যাওয়া। বিগত সময়ের ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন উদ্যমে নতুনের কেতন ওড়ানোর আনন্দ উপভোগ করা। অকল্যাণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে অবারিত কল্যাণের পথে ধাবিত হওয়ার শুভযাত্রা শুরু করা। নতুন মাস দিয়ে শুরু হয় নতুন বছর। নতুন মাসে সময়ের মালিকের কাছে আমাদের আবেদন, ‘হে আল্লাহ! আপনি এই মাসকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ইমান, প্রশান্তি ও ইসলাম সহযোগে আনয়ন করুন; আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। এই মাস সুপথ ও কল্যাণের।’জামে তিরমিজি : ৩৪৫১

ইসলামের শিক্ষা হলো, সময়ের সঙ্গে কোনো অমঙ্গল কিংবা অকল্যাণের কোনো সংযোগ নেই; ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। কল্যাণ-অকল্যাণ ও মঙ্গল-অমঙ্গল মানুষের কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। হাদিস শরিফে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সময়কে দোষারোপ করো না, কালকে গালমন্দ করো না; কারণ, আমিই মহাকাল, আমিই সময়ের নিয়ন্তা।’হাদিসে কুদসি

পুরনো বছরের তথা অতীতের পাপরাশির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, সেই সঙ্গে নতুন বছরে পাপকাজ না করার এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বার্থে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করা, আল্লাহর আনুগত্যের তওফিক কামনা করা, দেশ ও সমগ্র মুসলিম জাতির সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনায় আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করা।

যেহেতু নববর্ষ হলোসময়ের একটি অংশ থেকে অন্য অংশে পদার্পণ, তাই এটিও হলো নিজেকে পরিবর্তন ও উন্নয়নের একটি সুযোগ। সুতরাং এ সময়ে আমাদের যা করা উচিত তা হলো জীবনকে নবায়ন করা। জীবনের জন্য আল্লাহর প্রতি

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, নেক হায়াতের জন্য দোয়া করা। অতীতের গোনাহ থেকে তওবা করে কৃত ভুলভ্রান্তির জন্য বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। কারও জান, মাল ও ইজ্জতের ক্ষতি করে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া এবং সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ভবিষ্যতে নেক আমলের সংকল্প করা। বিগত সময়ে কেউ বিরূপ আচরণ করে থাকলে মন থেকে তা ক্ষমা করে দেওয়া। কারও কাছে বৈধ দেনা-পাওনা বা লেনদেন থাকলে তা আদায়ে বিধিসম্মত সামাজিক পন্থা অবলম্বন করা। সব মানুষ যেন সুখে-শান্তিতে থেকে ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে, সেই প্রার্থনা করা।

নববর্ষ হলোসময়ের একটি অংশ পার হয়ে অন্য অংশে গমন করা। নববর্ষ জীবনের স্মৃতি ও আমলনামায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। তাই এ সময়ে এমন কোনো কাজ করা কাম্য নয়, যা যেকোনো সময়ই করা উচিত নয়। নববর্ষ মানে এই নয়, আজ এ সময়ে আমলনামা লেখা থেকে ফেরেশতারা বিরত থাকবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য করিতকর্মা প্রহরী রয়েছে তার কাছেই।’সুরা কাফ : ১৮

অর্থাৎ মানুষ যখন যেখানে যে অবস্থায় যা করে, যা বলে, যা ভাবেসবই ফেরেশতারা লিখে তার আমলনামায় সংরক্ষণ করেন। সুতরাং নববর্ষের মতো সময়ের একটি এহেন গুরুত্বপূর্ণ পর্বে এমন কোনো কাজ করা সমীচীন নয়, যা আমাদের আমলনামাকে কলঙ্কিত করবে। ইসলামি আলেমদের পরামর্শ হলো, নেক আমলের মাধ্যমে বছর শুরু করা। যাতে নতুন বছরের নতুন প্রভাত নবজীবনের আহ্বান নিয়ে আসে। যেসব কাজে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) অসন্তুষ্ট হন; মানুষের অকল্যাণ হয়, কোনো মানুষের জীবনহানি ঘটে, দৈহিক ক্ষতি হয়, কারও সম্পদহানি, আর্থিক ক্ষতি, সম্মানহানি না করা। সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।

অন্যদিকে যেসব কাজে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সন্তুষ্ট হন, মানুষের কল্যাণ হয়, সেগুলো হচ্ছেনেক আমল। এমন কাজ বেশি বেশি করা। এসব কাজের অন্যতম হলোআপ্যায়ন-আতিথেয়তা, দান-খয়রাত, সদুপদেশ, মঙ্গল প্রার্থনা এবং নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, তাসবিহ-তাহলিল ও তাকবির, জিকির-আসকার এবং তওবা-ইস্তিগফার ইত্যাদি করা।

একটি নতুন বর্ষের সূচনা শুধু আগমন নয়, বিদায়ও। জীবনের সময়-সম্পদ থেকে একটি পূর্ণ বছর ব্যয় হয়ে গেল। তাই নতুন বছরের আগমন বিদায়েরই বার্তাবাহক। আল্লাহতায়ালা আমাদের বহু সম্পদে সম্পদশালী করেছেন। অর্থ-সম্পদ, জ্ঞান-সম্পদ ও সময়-সম্পদ এসব আল্লাহর দান। তবে একটি প্রকাশ্য পার্থক্য এই যে, অর্থ-সম্পদ, জ্ঞান-সম্পদ ও অন্যসব সম্পদে বিয়োগ যেমন হয়, তেমনি যোগও হয়। মানুষ যেমন অর্থ ব্যয় করে তেমনি উপার্জনও করে। তদ্রুপ প্রতিনিয়ত আমরা যেমন বিস্মৃত হই, তেমনি নতুন নতুন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হই। পক্ষান্তরে সময়-সম্পদে শুধু বিয়োগ, কোনো যোগ নেই। আমাদের জীবন থেকে দিন-রাত, সপ্তাহ, মাস ও বছর শুধু বিয়োগই হচ্ছে, যোগ হচ্ছে না। এভাবে প্রত্যেকের জীবনে সেই অমোঘ মুহূর্ত মৃত্যু উপস্থিত হবে, যা আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন।

ইসলামি আলেমদের মতে, দিবস ও রজনীর আগমন ও নির্গমন একটি বিশেষ বার্তা বহন করে, যা অনুধাবন করাই হলোপ্রকৃত বুদ্ধিমানের পরিচয়। হাদিস শরিফে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বিচক্ষণ ওই ব্যক্তি যে নিজের হিসাব গ্রহণ করে এবং মৃত্যুর পরের জন্য কর্মব্যস্ত থাকে। আর অক্ষম ওই ব্যক্তি, যে নিজেকে প্রবৃত্তির অনুগামী করে আর আল্লাহর কাছে অমূলক বাসনা পোষণ করে।’

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION